প্রকাশিত: ২৬/০৫/২০১৯ ৩:৪১ পিএম

উখিয়া প্রতিনিধি ::
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়ছে স্থানীয় জনসাধারণ। ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা দৈনন্দিন জনজীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বেড়েই চলছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, কিন্তু এসব এড়ানোর কোনো পথ খোলা নেই তাঁদের।

জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ইংরেজি তারিখ থেকেই বিকেল ৫ টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস ধরে ফোরজি নেটওয়ার্ক হীনতায় ভুগছে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আওতাধীন স্থানীয় এলাকাবাসী। টানা প্রায় ১২-১৩ ঘন্টা ফোরজি নেটওয়ার্ক সুবিধা পাচ্ছে না তাঁরা। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও তুমুল সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

অনেকেরই অভিযোগ, তাঁরা কি কারণে ফোরজি নেটওয়ার্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কেন তাঁরা রোহিঙ্গাদের জন্য এরকম বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। সিম অপারেটর কোম্পানিগুলো কেন রোহিঙ্গা ইস্যুর দোহাই দিয়ে দৈনিক ঘন্টার পর ঘন্টা ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখবে। ফোরজি-এর মতো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারী ও অনলাইন কর্মক্ষেত্রে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

তবে এই নিয়ে শতাধিকবার সিম কোম্পানিগুলোর সাহায্য কেন্দ্রে অভিযোগ করা হলে তাঁরা বারবার জানিয়েছেন বিটিআরসি কর্তৃক রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর আশেপাশের এলাকায় ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়।

এই ভোগান্তির স্বীকার হওয়া রায়হান উদ্দিন বলেন, “আমার বাড়ি ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকায়। যদিও পড়ালেখার সুবাদে কক্সবাজার সদরেই বেশিরভাগ সময় থাকা হয়। মাঝেমধ্যে বিরতি পেলে পরিবারের টানে গ্রামে ছুটে এলে বারংবারই আমাকে ফোরজি হীনতায় ভুগতে হয়। বিকেল ৫ টার পরে ফোরজি নেটওয়ার্ক থাকে না। শহরে থেকে ফোরজি নেটওয়ার্ক ভোগ করতে পারি কিন্তু এখানে আসলে তা সম্ভব হয়না।”

তিনি আরো বলেন, “এই আধুনিক বিশ্বের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা ফোরজি নেটওয়ার্ক না থাকাটা খুবই দুঃখজনক এবং আমি এর নিন্দা জানচ্ছি।”

একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মোজাম্মেল জানান,”সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যার পর দূরের কেউ আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চাইলে ব্যর্থ হই। দিনের বেলায় তেমন সময় পায়না ফোন ব্যবহার করার জন্য। যখনই সময় পাই তখন যথেষ্ট নেটওয়ার্ক পায়না যা অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর।”

এই ঘন্টার পর ঘন্টা ফোরজি না-থাকার কারণ শুধুই কি রোহিঙ্গারা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, “আমাদের মনে হয়না শুধু রোহিঙ্গাদের কারণেই ফোরজি এর মতো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থেকে আমরা বঞ্চিত। শুনেছি এটা নিয়ে চক্রান্ত চলছে। ক্যাম্পের দোহাই দিয়ে অনেক লোক অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে এলাকায় এনজিওর কর্মকর্তা ও স্থানীয় মানুষদের অবস্থানের সুযোগ নিয়ে Wi-fi নেটওয়ার্কের প্রচলন বাড়িয়ে এসব করছেন। এবং কয়েকটি চক্র এসবে জড়াজড়িত হয়ে করছে বলে শোনা যাচ্ছে। এগুলা খুবই অন্যায় করা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, “ফোরজি নেট বন্ধ হওয়ার কারণ যদি রোহিঙ্গা হয় তাহলে আমরা সেরকম মানবতা চাই না। রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের এলাকায় ফোরজি নেট পুনঃরায় চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।”

ক্যাম্পের আওতাধীন পালংখালী ইউনিয়নের উদ্যোক্তা টিটু এ বিষয়ে বলেন, “আমরা ইউনিয়নের দাপ্তরিক কাজে Wi-fi এর মতো সরকারি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সাধারণ মানুষ কি করবে। এখন দেশ হয়ে পড়েছে প্রযুক্তি নির্ভর। এখনকার যুগে আমারা সকলেই বেশিরভাগ কাজ করে থাকি অনালইনের মাধ্যমে। এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে দেশের কোনো অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে ফোরজি নেটওয়ার্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়াটা আসলে হতাশাজনক।আমিও ব্যক্তিগতভাবে এটার স্বীকার হচ্ছি।”

এ বিষয়ে উল্লিখিত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,”সিম কোম্পানিগুলো যদি ক্যাম্প এলাকায় নিয়মিত ফোরজি না দেয় আমাদের কিছু করার নেই। গ্রাহকদের যদি তাঁরা ফোরজি না দিয়ে থাকে তাহলে তাদেরকেই গ্রাহকরা হার মানাবে অন্য উপায়ে। ফোরজি নেটওয়ার্ক সচল রাখলে তো তাদেরই লাভ। তাঁরাই যদি এরকম করে তাহলে সাধারণ জনগণের কি করার থাকতে পারে।

তিনি আরো বলেন,”যারা অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে Wi-fi নেটওয়ার্কের ব্যবসা দিনদিন সম্প্রসারণ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত তাঁদের অভিযোগের যথার্থ উত্তর নিজ দায়ীত্বে ফিরিয়ে দেওয়া। আর এখানে প্রশাসনিক ও সরকারিভাবে একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ক্যাম্প এলাকা হওয়ায় তাঁরা সমসাময়িকভাবে ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ রেখে থাকেন।”

ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ্য তিনি আরো বলেন, “আমি নিজেই ফোরজি নেটওয়ার্ক শুন্যতায় ভোগছি। আমরা এব্যাপারে প্রশাসনিক ও সরকারিভাবে কোনো সহযোগীতা নাও পেতে পারি তাই গ্রাহকদের তাঁদের নিজস্ব সিম কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে লিখিত দরখাস্ত করতে হবে।”

পাঠকের মতামত

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক ১

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে উত্তীর্ণ হলেও মৌখিকে ধরা ...

গহীন পাহাড়ে কঠোর প্রশিক্ষণ, যা বললেন কুকি চিনের আকিম বম

বান্দরবানে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী শাখার বান্দরবান সদর ও ...

নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন বর্জনে জেলা বিএনপির লিফলেট বিতরণ

বান্দরবান জেলার আসন্ন নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনে বান্দরবান জেলা বিএনপির দিনব‌্যাপি লিফলেট বিতরণ করা ...

নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে অভিযান, ৮টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার

বান্দরবানের নাইক্ষ‍্যংছড়ির গহিন অরণ্যে দুর্বৃত্তদের আস্তানায় হানা দিয়ে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ...